প্রাথমিক জীবন
দিলারা ১৯৪৩ সালের ১৯ জুন তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির (বর্তমান পশ্চিমবঙ্গ) বর্ধমান জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম রফিকউদ্দিন আহমেদ এবং মাতার নাম সিতারা বেগম। তার জন্মের কিছুদিন পরে তার পরিবার আসানসোল জেলায় চলে যান। ১৯৪৭ সালে ভারত বিভাগের পর তারা যশোর জেলায় চলে আসে। তিনি ঢাকার বাংলাবাজার সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়াশুনা করেন। স্কুলে তিনি প্রথম মঞ্চ নাটকে অভিনয় করেন। পরে তিনি ইডেন মহিলা কলেজে ভর্তি হন। সেখানে তিনি নুরুল মোমেনের ছাত্রী ছিলেন।
কর্মজীবন
দিলারা জামানের কর্মজীবন শুরু হয় শিক্ষকতা দিয়ে। তিনি শাহীন স্কুলে শিক্ষকতা করেছেন। তার প্রথম টেলিভিশনে অভিনয় করেন ১৯৬৬ সালে ত্রিধরা নাটকে। এই নাটকে তার মায়ের চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন নাট্যকার মুনীর চৌধুরীর স্ত্রী লিলি চৌধুরী। তার অভিনীত প্রথম ধারাবাহিক নাটক সকাল সন্ধ্যা। ১৯৯৩ সালে তিনি মোরশেদুল ইসলাম পরিচালিত স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র চাকা-এ অভিনয় করেন। তার অভিনীত প্রথম চলচ্চিত্র হুমায়ূন আহমেদ পরিচালিত বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র আগুনের পরশমণি । ২০০৮ সালে তিনি মুরাদ পারভেজ পরিচালিত চন্দ্রগ্রহণ চলচ্চিত্রে ময়রা মাসী চরিত্রে অভিনয় করেন। এই চরিত্রে অভিনয়ের জন্য তিনি একই চলচ্চিত্রের তার সহশিল্পী চম্পার সাথে যৌথভাবে শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেত্রী বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন।
২০১৪ সালে বিশ্ব ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে নির্মিত চয়নিকা চৌধুরী নির্দেশিত ভোরের ফুল ও রেদওয়ান রনি নির্দেশিত ভালোবাসা ১০১ নাটকে অভিনয় করেন। এছাড়া মুরাদ পারভেজ পরিচালিত বৃহন্নলা চলচ্চিত্রে গ্রামের এক বুড়ি চরিত্রে অভিনয় করেন। ২০১৬ সালে তিনি সাদাত হোসাইন পরিচালিত প্রযত্নে শীর্ষক স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। এছাড়া থ্রি সিস্টার্স ও ফেরদৌস হাসান রানার নির্দেশনায় ফুল আর কাঁটা টিভি নাটক, গুগল সব জানে ও মতিয়া বানু শুকুর নির্দেশনায় কালো আল্পনা ধারাবাহিক নাটকে অভিনয় করেন। ২০১৭ সালে তৌকীর আহমেদের পরিচালনায় হালদা চলচ্চিত্রে তিনি বয়োজ্যেষ্ঠ নারী সুরৎ বানু চরিত্রে অভিনয় করেন। এছাড়া নির্মাণাধীন রয়েছে নূরুল আলম আতিকের পরিচালনায় লাল মোরগের ঝুঁটি চলচ্চিত্র।
ব্যক্তিগত জীবন
দিলারা জামান ফখরুজ্জামান চৌধুরীর সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। ফখরুজ্জামান বাংলা একাডেমি পুরস্কারপ্রাপ্ত কথাসাহিত্যিক। তাদের দুই কন্যা – তানিয়া ও যুবায়রা। দুই কন্যার মধ্যে তানিয়া ডাক্তার এবং যুবায়রা পেশায় আইনজীবী। তাছাড়া দিলারা জামানের একজন পালক ছেলে সন্তান রয়েছে, যার নাম আশফাক।

সম্প্রতি তিনি (দিলারা জামান) মাহমুদুল হাসান সায়েম প্রেজেন্টস জাকিয়া ইমির রচনা ও পরিচালনায় এপি প্রডাকশন হতে ‘মা’ নাটকের শুটিং শেষ করেন। নাটকটি কিছুদিনের মধ্যেই Dream Touch Media এর ইউটিউব চ্যানেলে মুক্তি পাবে।

ধন্যবাদ। জন্মদিন তো উদ্যাপন করি না। আলহামদুলিল্লাহ। তবে আফসোস, এখনো তো কিছুই তো করতে পারিনি। মানুষের মনে জায়গা করে নিতে বা মানুষ যাতে সব সময় মনে রাখে, সেই চেষ্টাই করে যাচ্ছি। জানি না, কতটুকু মানুষ মনে রাখবে।

জন্মদিন এলে দিলারা জামান স্মৃতিকাতর হয়ে পড়েন। খুব করে ছেলেবেলার কথা মনে পড়ে। ছেলেবেলার অনেকটা সময় যশোরে কাটিয়েছেন তিনি।
সেখানে আমের দিনে আম কুড়িয়েছেন। বৃষ্টির দিনে বৃষ্টিতে ভিজেছেন। মেঘ দেখলেই দৌড়ে ঘর থেকে বের হয়েছেন। কখনো মেঘ দেখে ভয় কাজ করেনি। বরং আনন্দ পেয়েছেন।
বাসা থেকে একটু দূরে একটা কদম গাছ ছিল। কদল ফুল ফোটার সময় যেতেন গাছের কাছে। কদম ফুল দেখে ভীষণ খুশি হতেন। আজকের দিনে সেসব কথা খুব মনে পড়ে।
জন্মদিনে আরও মনে পড়ে যশোর ছেড়ে ঢাকায় আসার দিনটির কথা। যশোরের জন্য খুব খারাপ লাগছিল সেদিন। মায়া লাগছিল খুব।
রেলগাড়িতে করে ঢাকার রেলস্টেশনে নেমে ঘোড়ার গাড়িতে করে বাসায় গিয়েছিলেন। তখন ১৯৫৪ সাল। ওইদিন প্রথমবার ঘোড়ার গাড়িতে উঠেছিলেন।
আবার যখন কলেজে পড়তে শুরু করেন, ঘোড়ার গাড়িতে করেই তিনি কলেজে যেতেন।
দিলারা জামান বলেন, ‘বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নস্টালজিয়ায় পেয়ে বসে। তবে, জন্মদিনে ফেলে আসা ছেলেবেলার দিনগুলোর কথা প্রচণ্ডভাবে মনে পড়ে। খুব মিস করি।’
